ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ায় আহত ৫০, আটক ৮

চকরিয়ার মানিকপুরে ইটভাটা উচ্ছেদে যাওয়ার পথে যৌথবাহিনী ও ভাটা শ্রমিকদের সংঘর্ষ

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর, ২০২৫ ০৬:২০ , আপডেট: ২০ নভেম্বর, ২০২৫ ০৬:২১

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


এম. মনছুর আলম, চকরিয়া:

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর ও লামার ময়ূরঘোনা–পাগলীপাড়া এলাকায় অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে যাওয়ার পথে যৌথবাহিনীর সঙ্গে ইটভাটা শ্রমিকদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কাকারা ইউনিয়নের পাহাড়তলী বাদশারটেক এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া, গাড়ি ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে সাংবাদিক, বিজিবি–পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

স্পেশাল অভিযানে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজুয়ান উল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন আলীকদম সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর হাফিজ, লামা উপজেলা সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট রুবায়েত আহমেদ, লামা থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তর অংশ নেয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মানিকপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পরিচালিত বেশ কয়েকটি ইটভাটা পরিবেশ আইন লঙ্ঘন, পাহাড় কাটা ও অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ করে ভাটা চালিয়ে আসছিল। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী সকাল ১০টার দিকে অভিযানে রওনা দেয়। কিন্তু বাদশারটেক এলাকায় পৌঁছালে মালিক–শ্রমিকরা ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন দিয়ে রাস্তা আটকে দেয়। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে বিজিবির একটি সরকারি গাড়িসহ অন্তত ৬টি গাড়ি ভাঙচুর হয়। দায়িত্ব পালনকালে কয়েকজন সংবাদকর্মীও হামলার শিকার হন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “হঠাৎ এলাকা দৌড়াদৌড়ি আর ইটপাটকেলের ঝড়ে অস্থির হয়ে ওঠে। কারা আঘাত করছে, কারা পালাচ্ছে—বুঝে ওঠার সুযোগ ছিল না।”

ইটভাটা মালিক ফোর বিএম-এর মাষ্টার খাইরুল ইসলাম ও ইউবিএম-এর দিদারুল ইসলাম দাবি করেন, হাইকোর্টের ৯৬০৬/২২ এবং ১৩১৯১/২২ নম্বর রিটের ভিত্তিতে পরিবেশ–ঝুঁকিমুক্ত স্থান চিহ্নিত করে ইটভাটা সরাতে জেলা প্রশাসনকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস পার হলেও প্রশাসন জায়গা নির্ধারণ করেনি। বরং হঠাৎ উচ্ছেদের নামে মালিক–শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। তারা বলেন, “আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আরও তিন মাস সময় চাইছি। ওই সময়ে ভাটা না সরালে জরিমানা মেনে নিতে রাজি ছিলাম।”

শ্রমিকদের একটি অংশ অভিযোগ করে বলেন, আগাম কোনো ঘোষণা ছাড়াই অভিযান চালানো হয়েছে। ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের সংসার চালানো চরম অনিশ্চয়তায় পড়বে।

লামার ফাইতং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ বলেন, “এলাকার ইটভাটাগুলো পুরোপুরি অবৈধভাবে চলছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করতে গেলে শ্রমিকরা হামলা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী মো. আরাফাতসহ ৮ জনকে আটক করেছে।” পুলিশ জানায়, আটক আরাফাত শ্রমিকদের উসকানি দেওয়ার মূল ভূমিকা রেখেছিল।

চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এম. আর. মাহমুদ বলেন, “মানিকপুর–ফাইতং এলাকায় পাহাড় কেটে ইট উৎপাদনের অভিযোগ বহুদিনের। আমরা অভিযানকে স্বাগত জানাই; তবে শ্রমিকদের পুনর্বাসন ছাড়া হঠাৎ অভিযান চালানোয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।”

লামা উপজেলা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুবায়েত আহমেদ বলেন, “ইটভাটা মালিক–শ্রমিকরা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িসহ সরকারি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।”